আমরা বাঙালী
  • প্রারম্ভিকা
  • ' আমরা বাঙালী ' সম্পর্কে
    • কি ও কেন
    • আবির্ভাব
    • পরিচিতি
    • যাঁরা প্রাণ দিলেন
    • শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার
    • দাবী
    • বর্তমান সমস্যা প্রসঙ্গে
  • বাঙলা
    • বাঙলার পরিচিতি
    • বাঙলার ভূখন্ডের ইতিকথা
    • বাঙলার সভ্যতার উন্মেষ
    • বাঙালী জাতির বয়স
  • বাংলা ভাষা
    • বাংলা ভাষা
    • বাংলা লিপি
    • বাংলা উচ্চারণ
    • বাংলা বর্ণমালা
    • বাংলা ভাষার মাধুর্য্য
    • ভাষা আন্দোলন
  • শোষিত ও বঞ্চিত বাঙলা
    • স্বাধীনোত্তর বাঙলা
    • উদ্বাস্তু পুনর্বাসন
    • লিংগুয়িষ্টিক কনˎভেনশন
    • ৫ জেলার বঙ্গভুক্তি নাকচ
    • গোর্খাল্যান্ডের দাবী
    • কামতাপুর আন্দোলন
    • অসম
    • ত্রিপুরা
    • ঝারখন্ড
    • বাংলা ভাষার অবমাননা
  • প্রাউট
    • প্রাউট কি ও কেন
    • প্রাউট -এর বৈশিষ্ট
    • পঞ্চ-মূল নীতি
    • অভিমত
  • প্রদর্শনী
    • পশ্চিমবঙ্গ
    • ঝাড়খণ্ড
    • ত্রিপুরা
আমরা বাঙালী
  • প্রারম্ভিকা
  • ' আমরা বাঙালী ' সম্পর্কে
  • বাঙলা
  • বাংলা ভাষা
  • শোষিত ও বঞ্চিত বাঙলা
  • প্রাউট
  • প্রদর্শনী

বাংলা ভাষা

 

     সংস্কৃত ভাষার ৭ টি বিবর্তিত রূপ বা প্রাকৃত ভাষা রয়েছে ( প্রাকৃত মানে জনগণ সম্পর্কিত ) ।

সেই ৭ টি প্রাকৃত হচ্ছে-


১.  পূর্ব ভারতের মাগধী প্রাকৃত

২.  মধ্য-উত্তর ভারতের শৌরসেনী প্রাকৃত

৩.  উত্তর-পশ্চিম ভারতের পৈশাচী প্রাকৃত

৪.  প্রত্যন্ত উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাশ্চাত্য প্রাকৃত

৫.  সিন্ধু ব-দ্বীপের সৈন্ধবী প্রাকৃত

৬.  মধ্য-পশ্চিম ভারতে মালবী প্রাকত

৭.  দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত


     রাঢ়ের কথা বলতে গিয়ে মাগধী প্রাকৃত সম্বন্ধে আরও কিছুটা বলতে হয় । এই মাগধী প্রাকৃতের দুই কন্যা- 

পূর্বী অর্ধমাগধী ও পশ্চিমী অর্ধমাগধী । এদের মধ্যে পূর্বী অর্ধমাগধীর ছটি কন্যা রয়েছে, পশ্চিমী অর্ধমাগধীর

রয়েছে চারটি ।পূর্বী অর্ধমাগধীর ছটি কন্যারা হচ্ছে-


১.  মৈথিলী

২.  অঙ্গিকা

৩.  বাংলা

৪.  অসমিয়া

৫.  ওড়িয়া

৬.  কোশলী


পশ্চিমী অর্ধমাগধীর চারটি কন্যারা হচ্ছে-


১.  মগহী

২.  ভোজপুরী

৩.  নাগপুরী (সাদানি)

৪.  ছত্তিশগড়ী


     এদের মধ্যে নাগপুরী পশ্চিমী অর্ধমাগধীসঞ্জাত হলেও এর ওপর বাংলা ও কোশলী ভাষার প্রচণ্ড প্রভাব রয়েছে। কোশলী ভাষা পূর্বী অর্ধমাগধীসঞ্জাত হলেও এর ওপর পশ্চিমী অর্ধমাগধীসঞ্জাত নাগপুরী ও ছত্তিশগড়ীর প্রচণ্ড প্রভাব রয়েছে। ছত্তিশগড়ী ভাষা পশ্চিমী অর্ধমাগধীসঞ্জাত হলেও পূর্বী অর্ধমাগধীর কোশলী ও মহারাষ্ট্রীয় প্রাকৃতের বাড়ারী ভাষার (বিদর্ভ) দারুন প্রভাব রয়েছে। ছত্তিশগড়ী মাগধী এমন এক প্রত্যন্ত ভাষা যার ওপর শৌরসেনী প্রাকৃতের ভাসাগুলির কোন প্রভাব নেই। শৌরসেনী ভাষার অন্যতম বৈশষ্ট্য কর্ত্তৃকারকের লিঙ্গভেদে ক্রিয়ার লিঙ্গ পরির্বতন ছত্তিশগড়ী ভাষায় নেই। মাগধী সঞ্জাত হলেও মৈথিলীতে অল্পক্ষেত্রে কর্ত্তৃকারকের লিঙ্গভেদে ক্রিয়ার লিঙ্গভেদ পরিদৃষ্ট হয় (কেবল প্রেজেন্ট পারফেক্ট-এর ক্ষেত্রে, যেমন ‘রাম গেলাহ’, ‘সীতা গেলীহ’)। ভোজপুরীতে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এই লক্ষণ পরিদৃষ্ট হয়। যেমন ‘রাম করতা’, সীতা করতিয়া’, তার কারণ ভোজপুরীর সঙ্গে শৌরসেনী প্রাকৃতের ভুমিগত নৈকট্য।


      পূর্বী অর্ধমাগধীসঞ্জাত বাংলা ভাষাই তৎকালীন গৌড় বঙ্গ রাষ্ট্রের ভাষা হিসাবে স্বীকৃত ছিল এবং বর্তমানেও রাষ্ট্রভাষা হওয়ার যগ্যতা রাখে। কারণ, যদিও ইতিহাস স্বীকৃত মতটি হ’ল বাঙলা পূর্বী-অর্ধ-মাগধী কন্যা কিন্তু শ্রী সরকার প্রমাণ করেছেন বাংলা ভাষা প্রত্যক্ষ ভাবে পূর্বী-অর্ধ-মাগধী সঞ্জাত নয়- তার চেয়ে অনেক অনেক বেশী স্বকীয়তায় পরিপূর্ণ। এই বাংলা ভাষার মূখ্যতঃ বারটি উপভাষা (dialect) রয়েছে। কতগুলি এমন বড় বড় উপভাষা রয়েছে যাদের মধ্যে একাধিক খন্দ-উপভাষা (sub-dialect) রয়েছে।বাংলা ভাষার মূখ্যতঃ বারটি উপভাষা হল-


১.   মধ্যরাঢ়ীয় বাংলা


          ক) নলহাটি, মুরারই বাদে বীরভূম জেলা ।

          খ) কান্দি মহকুমা ।

          গ) সাওতাল পরগণা জেলার দুমকা, জামতুড়া ও দেওঘর মহকুমা ।

          ঘ) বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর ও আসানসোল মহকুমা ।

          ঙ) ধানবাদ জেলা (পশ্চিমে পরেশনাথ পাহাড় অবধি ) ।

          চ) পুরুলিয়া জেলা ।

          ছ) গিরিডি জেলার অনশবিশেষ ।

          জ) রাঁচি জেলার পূর্বাংশ- সিল্লি, সোনাহাতু, বুন্দু ও তমাড় ।

          ঝ) সিংভূম জেলার উত্তর-পূর্বাংশ ।

          ঞ) কাঁথি এলাকা বাদে মেদিনীপুর জেলা ।

           ট) ইন্দাস থানা বাদে বাঁকুড়া জেলা ।


     এই উপভাষার অনেকগুলি খন্দ-উপভাষা (sub-dialect) রয়েছে। এই উপভাষার দু’টি অন্যতম বৈশষ্ট্য হচ্ছে-


                    এক)  গন্তব্য বোঝালে দ্বিতীয়া বিভক্তির প্রয়োগ (যেমন ‘মুই ঘরে আছি’ কিন্তু ‘মুই ঘরকে যাবু’) ।

                     দুই)  সকর্মক ক্রিয়ার প্রথম পুরুষে ‘এক’ (ek) প্রত্যয়ের প্রয়োগ (যেমন ‘দিলেক’, ‘দিবেক’, ‘বসিবেক’, ‘হবেক’ ইত্যাদি ) ।

                                ‘তথাস্তু বলিয়া দেবী দিলা বরদান,

                                 দুধে ভাতে থাকিবেক তোমার সন্তান’।– ভারতচন্দ্র


২)   কাঁথি বাংলা 


         ক)  রসুলপুর নদীর মোহানা থেকে সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা অবধি।


৩)   কলিকাতা বাংলা


        ক) কলিকাতা শহর ।

        খ) রাঢ় ও বাগড়ির সন্নিহিত এলাকা ।


৪)   শান্তিপুরী বাংলা

 

        ক) নদীয়া জেলা ।

        খ) পূর্ব মুর্শিদাবাদের দক্ষিণাংশ ।

        গ) বর্ধমান জেলার ভাগিরথী তীরবর্তী সন্নিহিত এলাকা ।

        ঘ) ২৪ পরগণা জেলার বীজপুর-নৈহাটি অঞ্চল (এককালে এই শান্তিপুরি বাংলাই সাহিত্যিক বাংলা ছিল)।


৫)   শেরশাহাবাদিয়া বা জঙ্গীপুরী বাংলা

          

       ক) মুর্শিদাবাদ জেলার অধিকাংশ এলাকা ।

        খ) বীরভূম জেলার নলহাতি-মুরাই থানা এলাকা ।

        গ) সাঁওতাল পরগণার পাকুড় অ রাজমহল মহকুমা ।

        ঘ) মালদহ জেলা (শেরশাহাবাদ পরগণা মালদহ জেলায় অবস্থিত)।

        ঙ) কাটিহার জেলার কিছু অংশ ।

        চ) রাজশাহী জেলার নবাবগঞ্জ মহকুমা (এই উপভাষায় কয়েকটি খণ্ড-উপভাষা রয়েছে)।


৬)   যশোর বাংলা


      ক) বনগ্রাম মহকুমা বাদে যশোর জেলা ।

      খ) খুলনা জেলার সদর মহকুমা ।

      গ) ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমা ।


৭)   চন্দ্রদ্বীপি বাংলা


      ক) সমগ্র বাখরগঞ্জ জেলা ।

      খ) পটুয়াখালি জেলা ।

      গ) খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমা ।

      ঘ) ফরিদপুর জেলার মাদানিপুর মহকুমার সন্নিহিত এলাকা ।


  

৮) বিক্রমপুরী বাংলা


      ক) ডাকা জেলা ।

      খ) পাবনা জেলার পূর্বাংশ ।

      গ) ফরিদপুর জেলার সন্নিহিত এলাকা ।


৯) সিলেটী বাংলা


     ক) সিলেট জেলা ।

     খ) কাছাড় জেলা ।

     গ) ময়মনসিং জেলার সন্নিহিত এলাকা ।

     ঘ) কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মনবাড়িয়া মহকুমা ।

     ঙ) খাশিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড়ের দক্ষিণ পর্বতীয় সানুদেশ ।


১০) চট্টল বাংলা


    ক) চট্টগ্রাম বিভাগের সম্পূর্ণ উপকুল এলাকা । এই উপভাষায় কয়েকটি খণ্ড-উপভাষা রয়েছে ।


১১) বরেন্দ্রী বাংলা


     ক) নবাগঞ্জ মহকুমা বাদে রাজশাহী জেলা ।

     খ) পাবনা জেলার পশ্চিমাংশ ।

     গ) বগুড়া জেলার পশ্চিমাংশ ।

     ঘ) দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাংশ ।


১২) রংপুরী বাংলা


    ক) রংপুর জেলা ।

    খ) দিনাজপুর জেলা ।

     গ) বগুড়ার অংশবিশেষ ।

    ঘ) পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ।

    ঙ) কোচবিহার জেলা ।

     চ) জলপাইগুড়ি জেলা ।

     ছ) দার্জিলিং জেলার সমতল অংশ ।

    জ) পূর্ণিয়া জেলার কিষাণঞ্জ মহকুমা ও আরারিয়া মহকুমা পালাশী থানা ।

    ঝ) অসমের গোয়ালপাড়া জেলা ।

    ঞ) নেপালের ঝাঁপা জেলা ।


      এই বাংলার অনেকগুলি খণ্ড-উপভাষা রয়েছে। উপরিউক্ত তালিকা থেকে আমরা দেখছি, রাঢ়ে মুখ্যতঃ ও গৌণতঃ গোটা পাঁচেক উপভাষার প্রচলন রয়েছে। বাংলা ভাষার প্রতিটি উপভাষার আজ স্বাভাবিক গতি সাহিত্যক বাংলার দিকে। আর কিছুকাল পরে কোন উপভাষাই জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত থাকবেনা। তাই বিভিন্ন উপভাষার যে সকল ছড়া, লোকগীতি রয়েছে, অবিলম্বে সেগুলি সংগৃহিত ও সযত্নে রক্ষিত হওয়া উচিৎ। অন্যথা আর পঞ্চাশ বছর পর তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

লেখস্বত্ব © ২০২০ আমরা  বাঙালী  - সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত।