আমরা বাঙালী
  • প্রারম্ভিকা
  • ' আমরা বাঙালী ' সম্পর্কে
    • কি ও কেন
    • আবির্ভাব
    • পরিচিতি
    • যাঁরা প্রাণ দিলেন
    • শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার
    • দাবী
    • বর্তমান সমস্যা প্রসঙ্গে
  • বাঙলা
    • বাঙলার পরিচিতি
    • বাঙলার ভূখন্ডের ইতিকথা
    • বাঙলার সভ্যতার উন্মেষ
    • বাঙালী জাতির বয়স
  • বাংলা ভাষা
    • বাংলা ভাষা
    • বাংলা লিপি
    • বাংলা উচ্চারণ
    • বাংলা বর্ণমালা
    • বাংলা ভাষার মাধুর্য্য
    • ভাষা আন্দোলন
  • শোষিত ও বঞ্চিত বাঙলা
    • স্বাধীনোত্তর বাঙলা
    • উদ্বাস্তু পুনর্বাসন
    • লিংগুয়িষ্টিক কনˎভেনশন
    • ৫ জেলার বঙ্গভুক্তি নাকচ
    • গোর্খাল্যান্ডের দাবী
    • কামতাপুর আন্দোলন
    • অসম
    • ত্রিপুরা
    • ঝারখন্ড
    • বাংলা ভাষার অবমাননা
  • প্রাউট
    • প্রাউট কি ও কেন
    • প্রাউট -এর বৈশিষ্ট
    • পঞ্চ-মূল নীতি
    • অভিমত
  • প্রদর্শনী
    • পশ্চিমবঙ্গ
    • ঝাড়খণ্ড
    • ত্রিপুরা
আমরা বাঙালী
  • প্রারম্ভিকা
  • ' আমরা বাঙালী ' সম্পর্কে
  • বাঙলা
  • বাংলা ভাষা
  • শোষিত ও বঞ্চিত বাঙলা
  • প্রাউট
  • প্রদর্শনী

ত্রিপুরা

     ত্রিপুরায় স্বশাসন ও বাঙালী বিতাড়নের উদ্দেশ্যে প্রয়াত দশরথ দেববর্মা, অঘোর দেববর্মা উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ গঠন করেন ১৯৪৮ সালে। উপজাতিদের মধ্যে প্রচার করেছিলেন বাঙালীরা ত্রিপুরার রাজশাসন কেড়ে নিয়েছে। বাঙালীদের তাড়াতে না পারলে উপজাতিদের রক্ষা নেই। এটাই পরবর্তী সময়ে 'বাঙাল খেদাও' আন্দোলনের রূপ নেয়। এই আন্দোলনে বাঙালী বিদ্বেষের দ্রুতি বাড়িয়ে দেয় প্রয়াত বীরেন দত্তের বাঙালী বিদ্বেষী বক্তব্য ও কার্যকলাপ। 'বাঙাল খেদাও' আন্দোলন ক্রমে জঙ্গীরূপ ধারণ করে। ১৯৪৮ এর জুনে দশরথ দেববর্মা সিধাই থানা থেকে অস্ত্র লুট করেছিলেন। তখন তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারী হয়েছিল। বাঙালী হত্যা, গুম, অপহরণ, লুণ্ঠন, গৃহদাহ ইত্যাদি তখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল। বাঙালীরা তখন সন্ত্রাসের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিল। খোয়াইয়ের রামচন্দ্র ঘাট, সিপাহী জেলা, গোলাঘাটি ইত্যাদি এলাকায় বাঙালী গণহত্যা হয়েছিল। অনেকেরই ধারণা ঐ সমস্ত এলাকায় এখনও গণ কবর পাওয়া যাবে। প্রশাসন ছিল স্থবির। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি কুখ্যাত কমিউনিষ্ট নৃপেন চক্রবর্তী গোপনে প্রাণ বাঁচাতে ত্রিপুরায় প্রবেশ করেন ও পার্বত্য ত্রিপুরায় উপজাতি এলাকায় আশ্রয় নেন। দশরথ, অঘোর, বীরেনের সঙ্গে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন। ঐ সময় ( ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ) আগরতলা বাসিরা পূর্ব দিকে রানীর বাজার, উত্তর দিকে খেজুর বাগান, দক্ষিণ দিকে বিশালগড় যেতেও ভয় পেত। ১৯৫১ সালে দশরথ দেববর্মার নেতৃত্বে স্বাধীন ত্রিপুরার দাবী উঠেছিল। যদিও বাস্তব পরিস্থিতির চাপে ১৯৫২ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে আত্মগোপনকারী দশরথ দেববর্মা তার পদবীর 'বর্মা' বাদ দিয়ে শুধু 'দেব' উল্লেখ করে মোনোনয়ন পত্র জমা দেন ও পরে জয়ী হন। তারপর থেকে তিনি দশরথদেব নামেই পরিচিত হন ।


     ১৯৭৮ সালে ক্ষমতায় এল বামফ্রন্ট তথা সি পি আই এম । এসেই তাড়াহুড়ো করে লাল মুক্তাঞ্চল গঠন করার লক্ষে ৫ম ও ৭ম তপশীলি মোতাবেক উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষদ বিল পাশ করালো। উপজাতি ভোটের লক্ষে কংগ্রেসও অগ্রণী ভুমিকা নিয়ে সমর্থন করলো। ভবিষ্যতে এর কুফলের কথা কোন দলই চিন্তা করলো না। এই দুই দলের ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনায়, হটকারিতায় ও অদূরদর্শিতায় ১৯৭৯ সালে ত্রিপুরা উপজাতি-স্বশাসিত জেলা পরিষদ- একটা বিষবৃক্ষ স্থাপিত হ'ল। ১৯৮০ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী শনিবার ঐতিহাসিক সূর্যগ্রহণের দিন বিকালে আগরতলা মহাকরণে বিজয় রাঙ্খল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তীর সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। এরপরই বিজয় রাঙ্খল জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়েছিল। উল্লেখ্য ঐ সময় বিজয় রাঙ্খলের বিরুদ্ধে কাঞ্চনপুর ষড়যন্ত্র মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী ছিল।বিজয় রাঙ্খলের খবর দিলে ত্রিপুরা প্রশাসন ১০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তারপর উপজাতি যুব সমিতির বাজার বয়কটের ডাক দেয় ও বিজয় রাঙ্খালের টি.এন.ভি বাহিনী পরিকল্পিত ভাবে সারা ত্রিপুরায় সন্ত্রাস ও বাঙালী হত্যা শুরু করে; যা ১৯৮০ সালের ৬ই জুন বাঙালী গণহত্যার রূপ নেয় ও সারা ত্রিপুরা ছড়িয়ে পড়ে। এই গণহত্যার দুই বছর পর ১৯৮২ সালের রিপোর্টে প্রকাশ পায় ঐ সময়ে ১৪৩৯ জনকে হত্যা করা হয়েছিল, ২২,০০০ ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, শত শত স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২৩৪ টি শিবিরে ৩,১৫,২০৯ জন আশ্রয় নিয়েছিল। ২০ কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছিল। যদিও বাস্তবে এই হত্যা, গৃহদাহ, শরনার্থী ও ক্ষতির পরিমান তিনগুন ছিল। ঐ সময়ে ত্রিপুরা বিধানসভায় ৬০ টি আসনের মধ্যে ৫৬টি ছিল বামফ্রন্ট তথা সি.পি.এম-এর, বাকী ৪ টি আসন ছিল টি.ইউ.জে.এস-এর দখলে। এতবড় গণহত্যার পর একটা তদন্তও হ'ল না। নৃপেন বাবু বলেছিলেন উনি ক্ষমতায় থাকাকালীন কোন তদন্তই করা হবে না। এই তদন্তের বিরোধিতার কারণ ত্রিপুরাবাসীর নিকট স্পষ্ট হ'ল যখন দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ৮০'র গণহত্যার ব্লুপ্রিন্ট বের হ'ল । যা ছিল সি পি আই এমের ব্লু-প্রিন্ট। এটা ঠিক ১৯৮০ সালে গণহত্যার সময় দৈনিক সংবাদের ভুমিকা ছিল নক্কার জনক। 


     এরপর মিশ্রবসতির ত্রিপুরায় ৩০% উপজাতিদের জন্য ৭০% ভূমি নিয়ে এ.ডি.সি ঘঠিত হয় ১৯৮২ সালের ১৮ই জানুয়ারী। এ.ডি.সি-র বিষবাস্পে ত্রিপুরার হাজার হাজার বাঙালী মারা গেল, লক্ষ লক্ষ বাঙালী বাস্তুহারা হ’ল, কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হ’ল। জাতি বিদ্বেষের প্রাচীর পাকা হ’ল। ১৯৮৪ সালের ১লা এপ্রিল এ.ডি.সি তে ষষ্ঠ তপশীল প্রয়োগ হ’ল, ফলে ত্রিপুরায় বাঙালীদের অধিকার আরও সংকোচিত হয়। ১৯৮৮ সালে ১২ই আগষ্ট কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকারের সহযোগিতায় দিল্লীতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীবগান্ধী ও টি. এন. ভি-র সর্বাধিনায়ক বিজয় রাঙ্খলের মধ্যে চুক্তি স্মপাদিত হয়। সংখ্যাতত্ত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ত্রিপুরা বিধানসভার আরও তিনটি আসন উপজাতি সংরক্ষিত ঘোষিত হয়। কংগ্রেসর সঙ্গে টি.ইউ.জে.এস জোট, খ্রিষ্টান মিশনারি এন.এল.এফ.টি কে ও সি.পি.এম, এ.টি.টি.এফ (দুই উপজাতি ঘাতক বাহিনী)কে মদত দিয়ে ত্রিপুরায় জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম করলো। ত্রিপুরা থেকে শান্তি বিদায় নিল।

লেখস্বত্ব © ২০২০ আমরা  বাঙালী  - সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত।